ভূমিকা
আজকের প্রবন্ধে আমরা যেই বিষয়গুলোর দিকে আলোকপাত করবো তা হচ্ছে, প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২ নামক ইসলামী কেতাব লেখক এবং ইসলাম সম্পর্কে কেতাবটির লেখক যেসকল মিথ্যাচার করেছেন, সে সম্পর্কে। প্রকাশিত ঐ বইটির পাতায় পাতায় যেই বিপুল পরিমাণ মিথ্যাচার এবং হাস্যকর সব কুযুক্তি দেয়া হয়েছে, আমি শুধুমাত্র তার অল্পকিছু উদাহরণ তুলে ধরবো। উল্লেখ্য, আরিফ আজাদের কেতাবে খোদ ইসলাম ধর্মকেই আরিফ আজাদ এমনভাবে ধর্ষন করেছেন, যা পড়ে বোঝা মুশকিল যে, এটি কোন ছদ্মবেশি নাস্তিকের ইসলামকে অপদস্থ করার জন্য লেখা নাকি ইসলামপন্থী কারোর। কারণ ইসলামের খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিধান এই কেতাবে সরাসরি অস্বীকার করা হয়েছে। ইসলামী শরীয়ত অনুসারে এই কাজ সরাসরি কুফরি এবং এই কুফরি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বেশ কয়েকজন আমাকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন বইটির কিছু অংশ পড়ার এবং তা নিয়ে কিছু বলবার। যদিও এই বইটি পড়ার বা এর সমালোচনা লিখবার মত যথেষ্ট ইচ্ছা বা সময় কোনটাই আমার ছিল না, কারণ ইতিপূর্বে এই লেখকের কিছু মূর্খতা প্রসূত স্ট্যাটাস নিয়ে প্রচুর হাসাহাসি হয়েছিল। তথাপি বন্ধুদের ক্রমাগত অনুরোধের কারণে বইটির খানিকটা অংশ পড়লাম এবং এই প্রবন্ধটি লিখে ফেললাম। মনোযোগী পাঠকের জন্য অল্প কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো, বাকিটুকু আশাকরি যুক্তিবাদী যে কেউই নিজেরাই বের করে ফেলতে পারবেন। আমার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যুক্তিবাদী মননশীল পাঠকের চিন্তার খোরাক জোগানো। যেন তারা কোন কেতাব অন্ধের মত পড়েই বিশ্বাস না করে ফেলেন। অন্ততপক্ষে যাচাই বাছাই করে নেন। সেই আশা নিয়েই আজকের আলোচনা শুরু করছি। প্রাসঙ্গিকভাবে পাঠকগণ প্যারাডক্সিকাল সাজিদ ২: গল্পে জল্পে আরিফ আজাদের মূর্খতা এবং বিবর্তন নিয়ে আরিফ আজাদের মিথ্যাচার লেখা দুটি পড়ে নিতে পারেন।
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ?
প্রথমেই যেই বিষয়টি নিয়ে বলতে হচ্ছে, তা হচ্ছে, কেতাবটির নামকরণ। কেতাবটির নাম রাখা হয়েছে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ। প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ মানে কী? সাজিদ কেন প্যারাডক্সিক্যাল? প্যারাডক্স শব্দের মানে কী? শব্দটি আকর্ষনীয় এবং সদ্য মাদ্রাসা থেকে বের হওয়া একজন নিম্নশিক্ষিত মানুষের কাছে খুবই অর্থবহ মনে হতে পারে। একে তো ইংরেজি শব্দ, তার ওপর আরিফ আজাদের বেশীরভাগ পাঠক নিশ্চিতভাবেই শব্দটির মানে জানেন বলে মনে হয় না। তাই তাদের কাছে শব্দটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হওয়াই স্বাভাবিক। এমন একটি শব্দ, যা তারা আগে শোনেন নি, যেই শব্দটি ইংরেজি এবং যেটি শুনতে খুব ভারিক্কি শোনায়। ব্যাস, আরিফ আজাদের ভক্তরা এরকম একটা কিছুই মনেপ্রাণে চায়। কিন্তু আসলেই কি তা? আসুন প্রথমে নামকরণকে আমরা একটু ব্যবচ্ছেদ করে দেখি। প্যারাডক্সিক্যাল শব্দটির সিনোনিম গুলো প্রথমে জেনে নিইঃ “Paradoxical | Synonyms of Paradoxical by Oxford Dictionaries Thesaurus.” Oxford Dictionaries | English, Oxford Dictionaries
Synonyms of paradoxical in English:
ADJECTIVE
1‘it was paradoxical that a government dedicated to privatization should produce a bill to nationalize the legal profession’
SYNONYMS
contradictory, self-contradictory, inconsistent, incongruous, anomalous, conflicting
improbable, impossible, odd, illogical, confusing, absurd, puzzling, baffling, bewildering, incomprehensible, inexplicable
rare oxymoronic

পাঠক লক্ষ্য করবেন, প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদের সিনোনিমস হচ্ছে,
- contradictory(পরস্পরবিরোধী, উল্টাপাল্টা),
- self-contradictory (স্ববিরোধী , আত্মবিরোধী),
- illogical (অযৌক্তিক), confusing (বিভ্রান্তিকর),
- absurd (কিম্ভুতকিমাকার)
আরিফ আজাদকে এই জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ দেয়া যেতে পারে, যে তিনি তার বইটির একদম সঠিক নামকরণ করেছেন। এই কেতাবটির চরিত্র সাজিদ আসলেই একজন স্ববিরোধী, অযৌক্তিক, বিভ্রান্তিকর, কিম্ভুতকিমাকার চরিত্রই বটে। যা আলোচ্য লেখাটিতে আমি প্রমাণ করবো বলেই আশা করি। সিনোনিমগুলো ব্যবহার করলে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদকে এভাবেও বর্ণনা করা যেতে পারেঃ
- পরস্পরবিরোধী সাজিদ
- উল্টাপাল্টা সাজিদ
- স্ববিরোধী সাজিদ
- আত্মবিরোধী সাজিদ
- অযৌক্তিক সাজিদ
- বিভ্রান্ত সাজিদ
- কিম্ভুতকিমাকার সাজিদ
এগুলো সবই আরিফ আজাদেরই দেয়া নাম থেকে বের করা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ। আরিফ আজাদ অন্তত এইদিক দিয়ে সততার পরিচয় দিয়েছেন যে, সাজিদকে বর্ণনা করেছেন স্ববিরোধী এবং অযৌক্তিক মানুষ হিসেবে। এই জন্য শুরুতেই আরিফ আজাদকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। তিনি একটি মোক্ষম শব্দ দিয়েই সাজিদকে বর্ণনা করেছেন। মূর্খ ভক্তদের সাথে অন্তত তিনি এই ক্ষেত্রে বেইমানি করেন নি। যাইহোক, এবারে মূল আলোচনায় চলে যাচ্ছি।
ধর্মে কোন জোরজবরদস্তি নেই?
সস্তা ও জনপ্রিয় ধারার অপবৈজ্ঞানিক ইসলামী কেতাব লেখক জনাব আরিফ আজাদ “ইসলাম কি অমুসলিমদের অধিকার নিশ্চিত করে” নামে একটা অধ্যায় লিখেছেন তার কেতাবটিতে। এই অধ্যায়টিতে উনি খুবই হাস্যকর এবং চমকপ্রদ কিছু দাবিদাওয়া উত্থাপন করেছেন, যা নিতান্তই কুযুক্তি ও মিথ্যাচারের সকল সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। সেইসব কুযুক্তি এবং মিথ্যাচার এক এক করে বলছি। যদিও জানি, অন্ধবিশ্বাসী পাঠকের মনে তা বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলবে না। তাই এই লেখাটি শুধুমাত্র যুক্তিবাদী ও মননশীল মানুষদের জন্যেই রচিত। তারা পড়লেই আমি আনন্দিত হবো।
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২ বইটির ৪৫ নম্বর পৃষ্ঠাতে লেখা, প্যারাডক্সিকাল সাজিদ ২, আরিফ আজাদ, সমকালীন প্রকাশনী, প্রকাশকাল ২০১৯

কুরআন বলছে, ধর্মের মধ্যে কোনোরকম জোরজবরদস্তি নেই! সেই সাথে আরিফ আজাদ এটিও লিখেছেন, ইসলাম কাউকে ধর্ম ত্যাগে বাঁধা দেয় না। খুবই নিম্নমানের মিথ্যাচার এবং বরাবরের মতই ইসলামের আদি ও অকৃত্রিম স্ববিরোধীতা! আসলেই প্যারাডক্সিক্যাল বা স্ববিরোধী বক্তব্য! আসুন দেখি, সহি হাদিস এবং অন্যান্য গ্রন্থ থেকে আসল সত্য।
আরিফ আজাদের লিখেছে,
কথাটি খুবই স্পষ্ট এবং পরিষ্কার। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলে দিচ্ছেন যে, ধর্মে কোনরকম চাপাচাপি নেই। আপনি হিন্দু ধর্ম পালন করতে চান? খ্রিস্টান অথবা ইহুদী ধর্ম? ইসলাম বলছে, আপনি সেটা অবশ্যই পারেন। ইসলাম এক্ষেত্রে আপনাকে বাঁধা দেবে না।
আসুন এবারে সরাসরি তাফসীর গ্রন্থগুলো থেকে কুরআনের এই আয়াতটির ব্যাখ্যা পড়ে নিই, আহকামুল কুরআন, খায়রুন প্রকাশনী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৫ – ৩৫৮




উপরের তথ্যসূত্র থেকে এটি পরিষ্কার যে, ইসলাম জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণে বাধ্য করে। এবারে ধরুন, আমি মুসলিম পরিবারে জন্মে হিন্দু বা ইহুদী বা খ্রিস্টান ধর্ম পালন করতে চাই। ইসলাম নয়। অথবা নাস্তিক হতে চাই। এক্ষেত্রে বিধান কি? অথবা আমি ইসলাম গ্রহণের পরে বুঝলাম, ইসলাম ধর্মটা আমার কাছে ভাল মনে হচ্ছে না। আমি এই ধর্মে আর থাকতে চাই না। ইসলাম কী আমাকে তা করতে দেবে? ইসলামে ধর্ম ত্যাগের বিধান কী?
আলোচনা শুরু করার সময়ই কয়েকটি সহিহ হাদিস বর্ণনা করা প্রয়োজন। আসুন কয়েকটি হাদিস পড়ে নিই। এখানে বর্ণিত তথ্যসূত্রগুলো পাঠক নিজেরাই যাচাই করে নিতে পারেন, নাস্তিক্য ডট কমের গ্রন্থাগার এবং তথ্যসমূহ পাতায় আরো বিস্তারিতভাবে রেফারেন্সগুলো খুঁজে পাবেন। হাদিসগুলো পড়ার পরে, ইসলাম ধর্মে কোন জোরজবরদস্তি নেই, এই কথাটি কতটুকু সত্য তা পাঠকই বিবেচনা করে দেখবেন। এখন আমরা আরো কিছু হাদিস পর্যালোচনা করি সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), আল্লামা আলবানী একাডেমী, চতুর্থ খণ্ড, হাদিস নাম্বার: ৩০০৩

পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ১৪/ কর, ফাই ও প্রশাসক
হাদিস নাম্বার: 3003
৩০০৩। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমরা মাসজিদে উপস্থিত ছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বেরিয়ে এসে বললেনঃ ইয়াহুদীদের এলাকায় চলো। ‘আমরা তাঁর সাথে বের য়ে সেখানে গিয়ে পৌঁছলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তাদেরকে ডেকে বললেনঃ হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম কবূল করো শান্তিতে থাকবে। তারা বললো, হে আবুল কাসিম! আপনি পৌঁছে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আবার বললেনঃ তোমরা ইসলাম কবূল করো, নিরাপত্তা পাবে। তারা বললো, হে আবুল কাসিম! আপনি পৌঁছে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ এ দাওয়াত পৌঁছে দেয়াই আমার উদ্দেশ্য ছিলো। তৃতীয় বারও তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করে বললেনঃ জেনে রাখো! এ ভুখন্ডের মালিকানা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। আমি তোমাদের এ ভূখন্ড থেকে বিতাড়িত করতে চাই। সুতরাং তোমরা কোনো জিনিস বিক্রি করতে সক্ষম হলে বিক্রি করো। অন্যথায় জেনে রাখো! এ ভূখন্ডের মালিক আল্লাহ ও তাঁর রাসূল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
উপরের হাদিসটি পড়লে বুঝতে সমস্যা হয় না, ইসলাম ধর্মে জোরজবরদস্তির কোন সুযোগ নেই, এই বক্তব্যটি কতটা হাস্যকর এবং স্ববিরোধী। নবী মুহাম্মদ নিজেই ইয়াহুদী গোত্রের কাছে গিয়ে হুমকি দিতেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করলে নিজ ভূমি থেকে ইয়াহুদিদের উৎখাত করবেন বলে শাসাতেন! বিশ্বাসী পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, নিশ্চয়ই তারা কোন অন্যায় করেছিল, সেই কারণে নবী মুহাম্মদ শাস্তি হিসেবে এরকম করেছিলেন। কিন্তু কোন ইয়াহুদী বা কয়েকজন ইয়াহুদী কোন অন্যায় করলে, বা অন্যায্য কাজ করলে খুব সহজেই সেই ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতো। কিন্তু পুরো একটি গোত্রই কীভাবে অপরাধী হয়? এমনকি বৃদ্ধা, বাচ্চা, নারীরাও? কীভাবে সম্ভব? একজন বা কয়েকজন ইহুদীর দোষে যদি পুরো গোত্রকে শাস্তি পেতে হয়, তাহলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যেই অত্যাচার চলছে, তাদের বিতাড়িত করা হচ্ছে আপন ঘরবাড়ি থেকে, সেটাও তো ন্যায্যতা পেয়ে যায়। তাই না? এরপরেও যদি কেউ বলে ইসলাম ধর্মে জোরজবরদস্তির কোন সুযোগ নেই, এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে?
আরো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস উল্লেখ করছি সূনানু নাসাঈ শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ৪৩২ ।
গ্রন্থঃ সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪/ গোসল ও তায়াম্মুম (كتاب الغسل والتيمم)
হাদিস নম্বরঃ (432)
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ২৬/ মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা
৪৩২। হাসান ইবনু ইসমাঈল ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বস্তু দান করা হয়েছে যা আমার পূর্বে কাউকে দেয়া হয়নি। এক মাস পথ চলার দূরত্ব থেকে শত্রুর মাঝে ভীতি সঞ্চার করার ক্ষমতা প্রদান করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। আমার জন্য মাটিকে মসজিদ ও পবিত্রতা অবলম্বনের উপকরণ করা হয়েছে। অতএব আমার উম্মতের কোন ব্যাক্তির সামনে যেখানেই সালাতের সময় উপস্থিত হয়, সে সেখানে সালাত আদায় করতে পারে। আর আমাকে শাফাআত দান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কোন নাবীকে দান করা হয়নি, আর আমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। আমার পূর্বের প্রত্যেক নাবী কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হতেন।
সহিহ, ইরউয়াউল গালীল ১/৩১৫-৩১৬, বুখারি হাঃ ৩৩৫, ৪৩৮, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ১০৫৪
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
It was narrated that Jabir bin ‘Abdullah said: “The Messenger of Allah (ﷺ) said: ‘I have been given five things that were not given to anyone before me: I have been supported with fear being struck into the hearts of my enemy for a distance of one month’s travel; the earth has been made a place of prostration and a means of purification for me, so wherever a man of my Ummah is when the time for prayer comes, let him pray; I have been given the intercession which was not given to any Prophet before me; and I have been sent to all of mankind whereas the Prophets before me were sent to their own people.” সূনান নাসাঈ ( ইসলামিক ফাউন্ডেশন ) হাদিস নম্বরঃ ৪৩২

সূনান নাসাঈ
গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
হাদিস নম্বরঃ (2818) অধ্যায়ঃ ৫৬/ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৫৬/২২. জান্নাত হল তলোয়ারের ঝলকানির তলে।
মুগীরাহ ইবনু শু‘বা (রাঃ) বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের জানিয়েছেন, আমাদেও প্রতিপালকের পয়গাম। আমাদের মধ্যে যে শহীদ হলো সে জান্নাতে পৌঁছে গেল।
‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলেন, আমাদের শহীদগণ জান্নাতবাসী আর তাদের নিহতরা কি জাহান্নামবাসী নয়? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হ্যাঁ।
২৮১৮. ‘উমার ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ্ (রহ.)-এর আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব সালিম আবূন নাযর (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তাঁকে লিখেছিলেন যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা জেনে রাখ, তরবারির ছায়া-তলেই জান্নাত।
উয়াইসী (রহ.) ইবনু আবূ যিনাদ (রহ.)-এর মাধ্যমে মূসা ইবনু ‘উকবাহ (রহ.) থেকে হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে মু‘আবিয়াহ ইবনু ‘আমর (রহ.) আবূ ইসহাক (রহ.)-এর মাধ্যমে মূসা ইবনু ‘উকবাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের অনুসরণ করেছেন। (২৮৩৩, ২৯৬৬, ৩০২৪, ৭২৩৭) (মুসলিম ৩২/৬ হাঃ ১৭৪২, আহমাদ ১৯১৩৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬২০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), হাদিস নম্বরঃ ২৮১৮
উপরের হাদিস দুইটি মনোযোগী পাঠকের জন্য উল্লেখ করা হলো, মূল বিষয়টি আরো ভালভাবে অনুধাবনের জন্য। এবারে আসুন, জেনে নেয়া যাক, ইসলাম ধর্ম অনুসারে ইসলাম ত্যাগের শাস্তি কী। উল্লেখ্য, ধর্মে জোরজবরদস্তি না থাকলে ইসলাম ত্যাগ করলে শাস্তি কেন পেতে হয়, তা আমার একেবারেই বোধগম্য নয়।
কারণ কথা দু’টি পরস্পরবিরোধী।
ইসলাম ত্যাগের শাস্তি
ইসলাম ধর্মে ধর্ম ত্যাগের শাস্তি কী? এই বিষয়ে শরীয়তের বিধান কী? আসুন নিচের হাদিসগুলো থেকে জেনে নিই। প্রথমে প্রখ্যাত ইসলামিক আলেম মাহমুদুল হাসান গুনভীর একটি ওয়াজের কিছু অংশ শুনি,
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান
হাদিস নাম্বার: 4300
৪৩০০. আহমদ ইব্ন মুহাম্মদ (রহঃ) — ইকরাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী (রাঃ) ঐ সব লোকদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন, যারা মুরতাদ হয়েছিল। এ সংবাদ ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পৌছলে, তিনি বলেনঃ যদি আমি তখন সেখানে উপস্থিত থাকতাম, তবে আমি তাদের আগুনে জ্বালাতে দিতাম না। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোময়া আল্লাহ্ প্রদত্ত শাস্তির (বস্তু) দ্বারা কাউকে শাস্তি দেবে না। অবশ্য আমি তাদেরকে আল্লাহ্র রাসূলের নির্দেশ মত হত্যা করতাম। কেননা, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কেউ দীন পরিত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়, তবে তোমরা তাকে হত্যা করবে। আলী (রাঃ) ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর এ নির্দেশ শুনে বলেনঃ ওয়াহ্! ওয়াহ্! ইব্ন আব্বাস (রাঃ) সত্য বলেহছেন। আর ইহাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) হাদিস নম্বরঃ ৪৩০০
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান (كتاب الحدود)
হাদিস নাম্বার: 4301
৪৩০১. আমর ইব্ন আওন (রহঃ) —- আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহ্র রাসূল”। তবে তিনটি কারণের কোন মুসলমানের রক্ত প্রবাহিত করা হালালঃ (১) যদি কোন বিবাহিত ব্যক্তি যিনা করে; (২) যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তবে এর বিনিময়ে হত্যা এবং (৩) যে ব্যক্তি দীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলমানের জামায়াত থেকে বেরিয়ে যায়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) সূনান আবু দাউদ ( ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৪৩০১
আসুন, সহি বুখারী গ্রন্থ থেকে সরাসরি হাদিসগুলো যাচাই করে নিই সহিহ বুখারী খণ্ড ৫ পৃষ্ঠা ২৩৬ ।


সহিহ বুখারী খণ্ড ১০ পৃষ্ঠা ২৬১
এবারে আসুন দেখি, প্রখ্যাত হাদিস প্রনেতা ইমাম মালিকের মুয়াত্তা ইমাম মালিক গ্রন্থ থেকে মুরতাদের শাস্তি কী হতে পারে তা জেনে নিই। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশ হওয়া মুয়াত্তা ইমাম মালিক দ্বিতীয় খণ্ডের ৪০৬, ৪০৭ নম্বর পৃষ্ঠায় হাদিসটি পাবেন। ডাউনলোড লিঙ্ক মুয়াত্তা ইমাম মালিক, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৬, ৪০৭


সেইসাথে, আরো অমানবিক ব্যাপার হলো, মুরতাদকে কেউ হত্যা করলে তার জন্য হত্যাকারীর ওপর মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ হবে না। বিষয়টি সন্নিবেশিত আছে বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন খণ্ড ১ এ বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৭

একই সাথে, মুরতাদের বিষয় সম্পত্তিও জবরদখল করা হবে, তেমনটিই বলা আছে ইসলামিক আইনে বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪৬

২০ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম স্কলারদের মধ্যে একজন সাইয়েদ আবু আ’লা মওদূদী’র প্রখ্যাত গ্রন্থ মুরতাদের শাস্তি গ্রন্থটিও সেই সাথে পড়া যেতে পারে। উল্লেখ্য, সাইয়েদ আবু আ’লা মওদূদী ইসলামের ইতিহাসে ইমাম গাজ্জালির পরে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্কলার, ইতিহাসের দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ ব্যক্তি যাহার গায়েবানা জানাজার নামাজ কাবাতে পড়া হয়। বইটির ডাউনলোড লিংক মুরতাদের শাস্তি। লেখকঃ সাইয়েদ আবু আ’লা মওদূদী




















উপরের আলোচনা থেকে মোটামুটি একেবারেই পরিষ্কার যে, ইসলাম ধর্ম কেউ ত্যাগ করলে, পৃথিবীর প্রায় সকল ইসলামিক স্কলার- আলেম ওলামার মতেই, তাকে হত্যা করা হবে। এর কোন অন্যথায় নেই। একে যদি বলা হয়, ইসলামে জোরজবরদস্তি নেই, তাহলে আমার হাসা ছাড়া আর কিছু বলবার ভাষা নেই।
অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুতে উল্লাস
প্রয়াত লেখক, মুক্তমনা ব্লগের কর্নধার এবং বাঙলাদেশে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ বিষয়ক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লেখক অভিজিৎ রায়কে ধর্ম সমালোচনার কারণে ইসলামি মৌলবাদীদের একটি অংশ বইমেলার সামনে কুপিয়ে হত্যা করে। অভিজিৎ রায়ের মগজ বের হয়ে পরে ছিল রাস্তায়। দেশের প্রগতিশীল সমস্ত মানুষ তখন প্রতিবাদ জানিয়েছিল এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের। যুক্তির বদলে যুক্তি, তথ্যের বদলে তথ্য, সমালোচনার বদলে সমালোচনাকেই প্রগতিশীল লেখকরা তখন ঐক্যবদ্ধভাবে সকলের থেকে আশা করছিলেন। ঠিক সেই সময়, অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর পরে কী উল্লাশ করেছিল এই আরিফ আজাদ! বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে তখন এই আরিফ আজাদের উল্লাসের চিত্রগুলো আমরা দেখে নিই। ভয়াবহ এইসকল কথা পড়লে যে কোন সুস্থ মানুষের গা শিউড়ে উঠবে। মানুষ এতটা ভয়াবহ কুৎসিত মানসিকতার হতে পারে? কারো জবাই হয়ে যাওয়ায় এরকম জান্তব উল্লাস করতে পারে? শুধুমাত্র ধর্মীয় মতপার্থক্যের জন্য একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে কতটা ঘৃণা করতে পারে?



উল্টোদিকে, প্রয়াত অভিজিৎ রায় মুসলিমদের সম্পর্কে কী লিখতেন? আসুন অভিজিৎ রায়ের একটি স্ট্যাটাস পড়ে নিই। লেখাটি পড়লেই একজন মুক্তমনা নাস্তিক এবং একজন ধর্মান্ধ ধর্মব্যবসায়ীর পার্থক্য বোঝা যায়।
“আমি নাস্তিক। কিন্তু আমার আশে পাশের বহু কাছের মানুষজন বন্ধু বান্ধবই মুসলিম। তাদের উপর আমার কোন রাগ নেই, নেই কোন ঘৃণা। তাদের আনন্দের দিনে আমিও আনন্দিত হই। তাদের উপর নিপীড়ন হলে আমিও বেদনার্ত হই। প্যালেস্টাইনে বা কাশ্মীরে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার হলে তাদের পাশে দাঁড়াতে কার্পণ্য বোধ করি না। অতীতেও দাঁড়িয়েছি, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবো। এটাই আমার মানবতার শিক্ষা।”
– অভিজিৎ রায়

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট?
এবারে আসুন, পরের পৃষ্ঠাতে যাই। সেখানে কী লেখা রয়েছে দেখে নিই।

উপরে সাজিদ ওরফে আরিফ আজাদ বলছে, কোরআনের ওই আয়াতটি নাকি নাজিল হয়েছিল যুদ্ধের উত্তপ্ত সময়ে। কিন্তু এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। এই আয়াতটির নাজিলের সময়কাল হচ্ছে যুদ্ধ পরবর্তী সময়, মক্কা বিজয়ের পর ৯ম হিজরীর জিলক্বদ মাসে। যখন কারো সাথেই মুসলিমদের উত্তপ্ত যুদ্ধ চলছিল না। সেই সময়ে হযরত মুহাম্মদ হযরত আবু বকরকে হজ্জের আমীর নির্বাচন করে প্রেরণ করেন, যাতে তিনি শরীয়তের বিধান অনুযায়ী লোকজনের হজ্জ আদায়ের ব্যবস্থা করেন। সেই সময়ই চুক্তি ভঙ্গ করার ব্যাপারে সূরা তাওবা বা সুরা বারা’আতের যে চল্লিশ আয়াত নাযিল হয়েছে তা ঘোষণা করেন। এই আয়াত সমূহে এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবেই উল্লেখ ছিল যে, এ বছরের পর মুশরিকরা মসজিদে হারামে প্রবেশ করতে পারবে না, উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করতে পারবে না, যার সাথে আল্লাহর রাসূল কোনো চুক্তি করেছেন তা ঐ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পূর্ণ করা হবে, যাদের সাথে চুক্তি নাই তাদেরকে ইয়াওমুন নাহার বা কুরবানির দিন থেকে চার মাসের সুযোগ দেয়া হলো- যদি এ সময়ের মধ্যে ইসলাম গ্রহণ না করে তাহলে এ সময়ের পর যেখানে পাওয়া যাবে হত্যা করা হবে। হযরত আলী আহলে বায়তের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় হযরত আবু বকরকে হজ্বের আমীর নির্ধারণ করে হযরত মুহাম্মদ হযরত আলীকে দিয়ে এ ঘোষণা দেয়ান। তথ্যসূত্র উল্লেখ করলেই ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন, আয়াতটি নাজিলের কারণ এবং প্রেক্ষাপট। সীরাতুল মুস্তফা (সা), খণ্ড ৩, আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী (রহ.)

সীরাতুল মুস্তফা (সা), খণ্ড ৩ , পৃষ্ঠা ৯৯ ডাউনলোড লিঙ্ক

সীরাতুল মুস্তফা (সা), খণ্ড ৩ , পৃষ্ঠা ১০০ ডাউনলোড লিঙ্ক
অর্থাৎ, এই আয়াত নাজিল কখনই যুদ্ধকালীন উত্তপ্ত অবস্থায় নয়, বরঞ্চ মক্কা বিজয়ের পরে চুক্তি না থাকা অথবা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া মুশরিকদের মক্কা থেকে বিতাড়িত করার নির্দেশ। ঐ সময় অতিক্রম হওয়ার পরে তাদের যেখানে পাওয়া যাবে জবাই করার সরাসরি হুমকি। আয়াতগুলো নিয়ে আরিফ আজাদ একেবারেই নির্লজ্জ পর্যায়ের মিথ্যাচার করে মিথ্যাচারের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে ফেলেছেন। আরিফ আজাদ সহ সকল ইসলামিক এপোলোজিস্টকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলতে চাই, ওই আয়াতগুলো কখনই যুদ্ধকালীন শত্রুর মুখোমুখী অবস্থায় নাজিল হওয়া আয়াত নয়। ওগুলো যুদ্ধের পরে মুশরেকদের মক্কা থেকে বিতাড়িত করার, চুক্তি যাদের সাথে আছে তাদের সময় বেঁধে দেয়ার, এবং নির্দিষ্ট সময় পরে তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে হত্যা করার সুনির্দিষ্ট আয়াত। এই নিয়ে যারা মিথ্যাচার করবে, তারা প্রকারান্তরে নাস্তিকদের জবাব দিতে গিয়ে আসলে ইসলামেরই মূল ইমান আকিদারই অবমাননা করবে। এবারে আসুন ইবনে কাসীরের সবচাইতে প্রখ্যাত তাফসীরে দেখি, সুরা তওবা কবে কোন পরিস্থিতিতে নাজিল হয়েছিল! শত্রুর মুখোমুখী যুদ্ধের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে, নাকি মক্কা বিজয়ের পরে কোন যুদ্ধ ছাড়াই? ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত তাফসীরে ইবনে কাসীরের সবগুলো খণ্ড ডাউনলোড করতে পারেন। তাফসীরে ইবনে কাসীর (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ৫১২-৫১৫, ৫২৫-৫২৭







ইসলামে জিহাদ কী শুধুমাত্র আত্মরক্ষামূলক?
এরপরে আরিফ আজাদ ওরফে সাজিদ দাবী করেছে, ইসলামে জিহাদ শুধুমাত্র এবং কেবলমাত্র আত্মরক্ষামূলক! এই বক্তব্য উল্লেখ করতে গিয়ে উনি ইসলামের জিহাদুত ত্বলাবকে পুরোপুরি অস্বীকার করে বসে আছেন! আমি নিশ্চিত, যার জন্য উনার বিরুদ্ধে সঠিক ইসলামের অনুসারী খোদ মুসলিমরাই যে কোনদিন কাফের হিসেবে ঘোষনা করবে। কারণ ইসলামের প্রেক্ষাপটে জিহাদ অবশ্য পালনীয় কর্তব্য, জিহাদকে নিয়ে মিথ্যাচার যারা করবে তারা সত্যিকার ইসলামের দৃষ্টিতে কাফের বলেই গণ্য হবে। যেকোন সত্যিকারের পড়ালেখা করা মুসলমানের চোখে জিহাদ নিয়ে মিথ্যাচার ইসলাম অবমাননারই শামিল। কিন্তু জিহাদ শুধুমাত্র আত্মরক্ষামূলক নয়। আত্মরক্ষামূলক ছিল ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে। সেই প্রাথমিক পর্যায়ের বা প্রাথমিক ধাপের জিহাদকেই একমাত্র জিহাদ হিসেবে উপস্থাপন করা অত্যন্ত নির্লজ্জ মিথ্যাচার। সাজিদ প্রশ্নকারীকে ইসলামের যুদ্ধের বিধান দেখায় এই আয়াত দিয়েঃ কোরআন ২:১৯০
“আল্লাহ বলছেন, তাদের সাথেই কেবল যুদ্ধ করো যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়”
সুরা বাকারা আয়াত ১৯০

উসুলে তাফসীর, নসেখ এবং মানসুখ
কোরআনের আয়াতগুলো সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গরূপে বোঝার জন্য অতি অবশ্যই উসুলে তাফসীর, নসখ এবং মানসুখ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থাকা জরুরি। ধরুন, কোরআনের কোন সুরার কিছুটা বিপরীতধর্মী কোন সুরা বা আয়াত যদি থাকে, তখন এই দুইটি আয়াতের মধ্যে যেই আয়াতটি পরে নাজিল হয়েছে সেটির দ্বারা পূর্বে নাজিল হওয়া আয়াত বা আয়াতসমূহ কার্যকারিতা হারায়, বা রহিত হয়ে যায়।
কোরআনে এই সম্পর্কে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। কোরআনে বলা হয়েছে, কোরআন ২:১০৬
আমি কোন আয়াত (বাক্য) রহিত করলে অথবা ভুলিয়ে দিলে তা থেকে উত্তম কিংবা তার সমতুল্য কোন আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান?
কুরআন ২:১০৬
যেমন ধরুন, মদ্যপানের বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করছি। এখানে মদ্যাপান বিষয়ক বিধানটি উল্লেখ করা হচ্ছে, বিষয়টি পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে। ইসলামের ইতিহাসে মদ্যপান ধাপে ধাপে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
মদ্যপান বিষয়ে প্রথম ধাপঃ
এই বিষয়ক প্রথম নাজিল হওয়া আয়াতে বলা হয়, মদে উপকারও আছে, অপকারও আছে।
সুরা বাকারার ২১৯ নম্বর আয়াতে বলা আছে, কোরআন সুরা বাকারা আয়াত ২১৯
তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার।
সুরা বাকারাঃ ২১৯
মদ্যপান বিষয়ে দ্বিতীয় ধাপঃ
পরবর্তী সময়ে নাজিল হয়, মাতাল অবস্থায় যেন মুমিনরা নামাজের কাছাকাছি না যায়। যা থেকে বোঝা যায়, মদ খাওয়াকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতিই দেয়া হয়েছে। এবং এটি তখনও নিষিদ্ধ হয় নি। কোরআন সুরা নিসা আয়াত ৪৩
হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ, আর (নামাযের কাছে যেও না) ফরয গোসলের আবস্থায়ও যতক্ষণ না গোসল করে নাও।
সুরা নিসা : আয়াত ৪৩
মদ্যপান বিষয়ে তৃতীয় ও শেষ ধাপঃ
এরপরে নাজিল হয়, মদ সম্পর্কে পরিপূর্ণ এবং শেষ বিধান। কোরআনের আয়াতে মদকে স্পষ্টভাবে নাপাক বলা হয়। মদকে উল্লেখ করা হয়, শয়তানি কর্ম ও পরস্পর লড়াই বিদ্বেষের উৎস হিসাবে। মূলত এই আয়াতের মাধ্যমে মদকে হারাম ঘোষনা করা হয়। যা সর্বশেষ আয়াত বিধায় এটিই কোরআনের আইন হিসেবে গণ্য হবে। কোরআন সুরা মায়েদা আয়াত ৯০-৯১
হে ঈমানদারগণ! এই মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শরসমূহ এ সমস্তই হচ্ছে ঘৃণ্য শয়তানি কার্যকলাপ। এগুলো থেকে দূরে থাকো, আশা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে। শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। তাহলে তোমরা কি এসব থেকে বিরত থাকবে?
সুরা মায়েদা: আয়াত ৯০-৯১
এখানে মদ্যপান বিষয়ে কোরআনের আইন বা আল্লাহ ও তার নবী সুস্পষ্ট নির্দেশনা হিসেবে সর্বশেষ নাজিল হওয়া আয়াতটিকেই গণ্য করতে হবে। কেউ যদি মদ্যপান বিষয়ে প্রথম নাজিল হওয়া আয়াত দেখিয়ে সামান্য উপকার আছে এমন যুক্তি দেখিয়ে মদ্যপানকে জায়েজ করার চেষ্টা করে, সেটি হবে কোরআনের মূল উসুলের সাথে প্রতারণা। ইসলাম এই অধিকার মুসলিমদের দেয় না।
ঠিক একইভাবে, জিহাদ এবং অন্যান্য সকল বিষয়েই সর্বশেষ নাজিল হওয়া বিধানকেই কোরআন, আল্লাহ এবং তার নবীর আইন হিসেবে গণ্য করতে হবে। প্রথম দিকে যদি তার বিপরীতধর্মী কোন আয়াত এসে থাকে, কোরআন পাঠের এবং ব্যাখ্যার নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে পরের আয়াতটি অন্যান্য আয়াতকে রহিত করবে বা অকার্যকর করে দিবে।
উল্লেখ্য, সুরা তওবা কোরআনের নাজিলের ক্রমানুসারে ১১৩ নম্বর, অর্থাৎ প্রায় শেষের দিকের সুরা। যা প্রথম দিকের আয়াতগুলোকে রহিত করে বা অকার্যকর করে দেয়।
জিহাদের প্রথম ধাপ
উল্লেখ্য, ইসলামের ইতিহাসে জিহাদের বিধান নাযিল হয়েছে পর্যায়ক্রমে। প্রাথমিক পর্যায়ে যখন মুহাম্মদের অনুসারীর সংখ্যা অতি অল্প ছিল, সেই সময় নাজিল হয় এই সুরাটিঃ কোরআন সুরা হজ আয়াত ৩৯
যুদ্ধে অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম।
সুরা হজ আয়াত ৩৯
মনে রাখতে হবে, উল্লেখ্য সুরার আয়াতটি জিহাদ অনুমোদনের প্রথম ধাপ।
নিজেদের ঘর-বাড়ি অর্থাৎ মক্কা থেকে বিতাড়িত হবার দীর্ঘ তিন বছর পর মুসলমানগণ আল্লাহর কাছ থেকে জিহাদের এই অনুমতি লাভ করেন। মনে রাখতে হবে, এটি মোটেও আদেশ নয়। অর্থাৎ, ইচ্ছে করলে তারা মোকাবেলা করতে পারে। আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমতি আছে। বাধা নেই, আদেশও নেই। অবশ্য কারও কারও মতে হিজরতের ১ম সালেই জিহাদের আয়াত অবতীর্ণ হয়!
জিহাদের দ্বিতীয় ধাপ
এরপরে জিহাদের যেই আয়াতটি নাজিল হয়, তা হচ্ছে সুরা বাকারার ১৯০ নম্বর আয়াতটি। এই আয়াতটি অনুমতি ছিল না, এই আয়াতটি হচ্ছে আদেশসূচক। তবে প্রতিরক্ষামূলক, আক্রমণাত্মক নয়। কোরআন সুরা বাকারা আয়াত ১৯০
আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
সুরা বাকারা আয়াত ১৯০
এই আয়াতের মাধ্যমে হযরত হযরত মুহাম্মদ তার অনুসারীদের প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের আদেশ দেন। এবং মুসলমানদের উপর এই জিহাদের বিধানকে ফরয করা হয়। এটি একটি অবশ্য কর্তব্য বিধান (তাকমিলা)।
জিহাদের তৃতীয় ও সর্বশেষ ধাপ
সবশেষে আদেশ করা হলো সকল শ্রেণীর কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার। চাই তারা যুদ্ধের সূচনা করুক আর নাই করুক। তাদের সামনে শুধুমাত্র দুটি রাস্তা খোলা, হয় ইসলাম গ্রহণ করবে নয় অপমানিত অবস্থায় জিজিয়া দিয়ে ইসলামের সামনে মাথা নত করবে। তৃতীয় কোনো পথ আর খোলা রইলোনা। মূলতঃ এটাই হলো জিহাদের পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ। কোরআন সুরা তাওবা আয়াত ২৯
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।
কোরআন ৯-২৯
মূলত, সকল ইসলামিক স্কলারের মতে, এই আয়াতের মাধ্যমেই জিহাদের বিধানকে পুর্ণতা দান করা হয়। জিহাদী বিধানের এই পূর্ণতা সাধিত হয় নবম হিজরীর হজ সমাপনের চার মাস পর।
এই সময়ই কুরআনে অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় ঘোষনা করা হয়, কোরআন সুরা তাওবা আয়াত ৫
অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
সুরা তাওবাঃ ৫
আরেকটি আয়াতে নাজিল হয়েছে এই সম্পর্কিত সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশটিঃ কোরআন সুরা তাওবা আয়াত ২৯
যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে না, আখেরাতেও না এবং আল্লাহ ও তার রাসূল যা কিছু হারাম করেছেন তাকে হারাম মনে করে না, তাদের সাথে যুদ্ধ কর যতক্ষণ না তারা নত হয়ে নিজ হাতে জিজিয়া আদায় করে।
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।
সুরা তাওবাঃ ২৯
সবশেষে আরও পরিষ্কার ভাষায় ঘোষিত হয়েছে, একদম শেষের দিকের সুরা তাওবার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আয়াতে- কোরআন সুরা আনফাল আয়াত ৩৯
আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন।
সুরা আনফালঃ ৩৯
যুক্তিবাদী পাঠক জানতে চাইতে পারেন, জিহাদের এই সর্বশেষ ধাপটি সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার উপায় কী? জিহাদের এই সর্বশেষ ধাপটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় আল হিদায়া গ্রন্থ থেকে।
ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ আল হিদায়াতে কী বলা হয়েছে দেখে নেয়া যাক। আল-হিদায়া হানাফী মাযহাবের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ, নির্ভরযােগ্য এবং জনপ্রিয় প্রামাণ্য ফিকাহ গ্রন্থ। ফিকাহ্ শাস্ত্রের জগতে, বিশেষতঃ হানাফি ফিকাহ্র পরিমণ্ডলে আল-হিদায়া একটি মৌলিক ও বুনিয়াদি গ্রন্থ । এক কথায় এ গ্রন্থকে হানাফী ফিকাহ্ শাস্ত্রের বিশ্বকোষ বলা যায়।


আল হিদায়া গ্রন্থের এই বাক্যটি মন দিয়ে পড়ুন, কাফিররা সুচনা না করলেও প্রয়োজন হওয়া মাত্রই অমুসলিমদের আক্রমণ করা যাবে। এই সংক্রান্ত হাদিসগুলো পড়ে নিনঃ
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭০
গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ (4370) অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ১. যে সকল বিধর্মীর কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত তাদের বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা বৈধ
৪৩৭০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) … ইবনু আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি নাফি’ (রহঃ) কে এই কথা জানতে চেয়ে পত্র লিখলাম যে, যুদ্ধের পূর্বে বিধর্মীদের প্রতি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন কি না? তিনি বলেন, তখন তিনি আমাকে লিখলেন যে, এ (নিয়ম) ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ মুসতালিকের উপর আক্রমণ করলেন এমতাবস্থায় যে, তারা অপ্রস্তুত ছিল (তা জানতে পারেনি।) তাদের পশুদের পানি পান করানো হচ্ছিল। তখন তিনি তাদের যোদ্ধাদের (পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ) হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টদের (নারী শিশুদের) বন্দী করলেন। আর সেই দিনেই তাঁর হস্তগত হয়েছিল। (ইয়াহইয়া বলেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি বলেছেন) জুওয়ায়রিয়া অথবা তিনি নিশ্চিতরূপে ইবনাতুল হারিছ (হারিছ কন্যা) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই হাদীস আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি সেই সেনাদলে ছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

অতর্কিত আক্রমণ বৈধ সহিহ মুসলিম খণ্ড ৬ ডাউনলোড করুন পৃষ্ঠা ১৮১
গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ (733) অধ্যায়ঃ ৪/ কিতাবুস স্বলাত
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ৬. দারুল কুফর বা অমুসলিম দেশে কোন গোত্রে আযানের ধ্বনি শোনা গেলে সেই গোত্রের উপর হামলা করা থেকে বিরত থাকা
৭৩৩। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরে শক্রর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করতেন। আযান শোনার অপেক্ষা করতেন। আযান শুনতে পেলে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকতেন। আযান শুনতে না পেলে আক্রমণ করতেন। একবার তিনি কোন এক ব্যাক্তিকে اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ বলতে শুলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ফিতরাত (দ্বীন ইসলাম) এর উপর রয়েছ। এর পর সে ব্যাক্তি أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ বলল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে এলে। সাহাবায়ে কিরাম লোকটির প্রতি লক্ষ্য করে দেখতে পেলেন যে, সে ছিল একজন ভেড়ার রাখাল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) হাদিস নম্বরঃ ৭৩৩
মক্কা বিজয়ের পরে সকলেই মুক্ত?
এরপরের পৃষ্ঠাতেই সাজিদ দাবী করলো, মক্কা বিজয়ের পরে মুহাম্মদ সবাইকে ডেকে বললেন, তোমরা সকলেই এখন থেকে মুক্ত! কথাটি আংশিক সত্য হলেও, এর পেছনে মুহাম্মদের দুরভিসন্ধি ছিল, তা বলাই বাহুল্য। সেটি পরে আলোচনা করছি। শুরুতে আরিফ আজাদের বক্তব্য এবং প্রাসঙ্গিক হাদিসটি দেখে নিই।

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ (1727) অধ্যায়ঃ ২২/ হজ্ব (হাজ্জ)
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ১১৬০. মক্কা ও হারম শরীফে ইহরাম ব্যতীত প্রবেশ করা। ইবন ‘উমর (রা) ইহরাম ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন। নবী করীম (সাঃ)হজ্জ ও উমরা আদায়েস সংকল্পকারী লোকেদেরই ইহরাম বাঁধার আদেশ করেছিলেন। কাঠ বহনকারী এবং অন্যান্যদের জন্য তিনি ইহরাম বাঁধার কথা উল্লেখ করেন নি
১৭২৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় (মক্কা) প্রবেশ করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিরস্ত্রাণটি মাথা থেকে খোলার পর এক ব্যাক্তি এসে তাঁকে বললেন, ইবনু খাতাল কাবার গিলাফ ধরে আছে। তিনি বললেনঃ তাঁকে তোমরা হত্যা কর।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) হাদিস নম্বরঃ ১৭২৭
ইবনু খাতাল এবং তার দুই নর্তকী দাসীকে হত্যা করার কথা বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়। যে কারণেই হোক, মক্কা বিজয় যে একেবারেই রক্তপাতহীন ছিল, তা নয়। এরকম দাবীও অসত্য এবং ভিত্তিহীন।
কিন্তু এখানেই কী শেষ? মক্কা বিজয়ের পরে প্রাথমিকভাবে কিছু ভাল ভাল কথা বললেও মুহাম্মদ কী সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে সুখে শাস্তিতে বসবাস করতে শুরু করেছিল? না! মুহাম্মদ সমস্ত ইহুদী খ্রিস্টানদের আরব উপত্যকা থেকে বিতাড়িত করেছিলেন, নির্মমতার সাথে। বহু যুগ ধরে বসবাস করা ইহুদী খ্রিস্টান এবং পৌত্তলিকদের বাপ দাদার ভিটেমাটি দখল করে নিয়েছিল মুহাম্মদ। আজকের প্যালেস্টাইনের দিকে তাকালে সেই নির্মমতার চিত্র আমরা খানিকটা দেখতে পাই, যেখানে ইহুদীরা প্যালেস্টাইনীদের উতখাত করে দখল করে নিয়েছে বহুযুগ ধরে সেখানে বসবাস করা প্যালেস্টাইনীদের ভিটেমাটি। বাপ দাদাদের আবাস স্থল!
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ১৪/ কর, ফাই ও প্রশাসক
হাদিস নাম্বার: 3003
৩০০৩। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমরা মাসজিদে উপস্থিত ছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বেরিয়ে এসে বললেনঃ ইয়াহুদীদের এলাকায় চলো। ‘আমরা তাঁর সাথে বের য়ে সেখানে গিয়ে পৌঁছলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তাদেরকে ডেকে বললেনঃ হে ইয়াহুদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম কবূল করো শান্তিতে থাকবে। তারা বললো, হে আবুল কাসিম! আপনি পৌঁছে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আবার বললেনঃ তোমরা ইসলাম কবূল করো, নিরাপত্তা পাবে। তারা বললো, হে আবুল কাসিম! আপনি পৌঁছে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ এ দাওয়াত পৌঁছে দেয়াই আমার উদ্দেশ্য ছিলো। তৃতীয় বারও তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করে বললেনঃ জেনে রাখো! এ ভুখন্ডের মালিকানা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। আমি তোমাদের এ ভূখন্ড থেকে বিতাড়িত করতে চাই। সুতরাং তোমরা কোনো জিনিস বিক্রি করতে সক্ষম হলে বিক্রি করো। অন্যথায় জেনে রাখো! এ ভূখন্ডের মালিক আল্লাহ ও তাঁর রাসূল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) হাদিস নাম্বার: ৩০০৩
গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ (4442) অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ২১. ইয়াহুদী ও নাসারাদের আরব উপ-দ্বীপ থেকে বহিস্কার
৪৪৪২। যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমার কাছে উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয়ই আমি ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়কে আরব উপ-দ্বীপ থেকে বহিস্কার করবো। পরিশেষে মুসলমান ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে থাকতে দেবো না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) সহীহ মুসলিম ( ইসলামিক ফাউন্ডেশন) হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪২
গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
হাদিস নম্বরঃ (4486) অধ্যায়ঃ ৩৩। জিহাদ ও সফর
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ২১. ইয়াহুদী ও নাসারাদের আরব উপ-দ্বীপ থেকে বের করে দেয়া
৪৪৮৬-(৬৩/১৭৬৭) যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) ….. জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) বলেন, আমার কাছে উমর ইবনু খাত্তাব (রাযিঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয়ই আমি ইয়াহুদী ও খ্ৰীষ্টান সম্প্রদায়কে আরব উপ-দ্বীপ থেকে বের করে দেবো। তারপর মুসলিম ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে থাকতে দেবো না। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪৪২, ইসলামিক সেন্টার ৪৪৪৪)
যুহায়র ইবনু হারব ও সালামাহ্ ইবনু শাবীব (রহঃ) ….. উভয়েই আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে এ সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪৪২, ইসলামিক সেন্টার ৪৪৪৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) সহীহ মুসলিম (হাদিস একাডেমি) হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৬
গ্রন্থের নামঃ সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) হাদিস নম্বরঃ (1607) অধ্যায়ঃ ১৯/ যুদ্ধাভিযান
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
পরিচ্ছদঃ ৪৩. আরব উপদ্বীপ হতে ইয়াহুদী-নাসারাদের বের করে দেওয়া প্রসঙ্গে
১৬০৭। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেনঃ আমি ইহুদী ও নাসারাদের আরব উপদ্বীপ হতে অবশ্যই বহিষ্কার করব। মুসলমান ব্যতীত অন্য কাউকে সেখানে বসবাস করতে দিব না।
সহীহ, সহীহা (১১৩৪), সহীহ আবূ দাউদ, মুসলিম
এ হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) হাদিস নম্বরঃ ১৬০৭
আল্লাহর চোখে অমুসলিমগণ
সবই বুঝলাম, কিন্তু আল্লাহ পাক অমুসলিমদের কী চোখে দেখতেন? আসুন কোরআন থেকে কয়েকটি আয়াত দেখে নেয়া যাকঃ
আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। কোরআন ৯৮:৬
কুরআন ৯৮ঃ৬
সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা অস্বীকারকারী হয়েছে অতঃপর আর ঈমান আনেনি। কোরআন ৮:৫৫
কোরআন ৮:৫৫
নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফেরেশতাগনের এবং সমগ্র মানুষের লা’নত। কোরআন ২:১৬১
কোরআন ২-১৬১
বস্তুতঃ এহেন কাফেরদের উদাহরণ এমন, যেন কেউ এমন কোন জীবকে আহবান করছে যা কোন কিছুই শোনে না, হাঁক-ডাক আর চিৎকার ছাড়া বধির মুক, এবং অন্ধ। সুতরাং তারা কিছুই বোঝে না। কোরআন ২:২৫৭
কোরআন ২-২৫৭
কাফেরদিগকে বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা পরাভূত হয়ে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নীত হবে-সেটা কতই না নিকৃষ্টতম অবস্থান। কোরআন ৩:১২
কোরআন ৩-১২
বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না। কোরআন ৩:৩২
কোরআন ৩-৩২
আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ। কোরআন ৭:১৭৯
কোরআন ৭:১৭৯
অতএব যারা কাফের হয়েছে, তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তি দেবো দুনিয়াতে এবং আখেরাতে-তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। কোরআন ৩:৫৬
কোরআন ৩-৫৬
যাতে ধবংস করে দেন কোন কোন কাফেরকে অথবা লাঞ্ছিত করে দেন-যেন ওরা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যায়। কোরআন ৩:১২৭
কোরআন ৩-১২৭
খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ, ওরা আল্লাহ্র সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন। বস্তুত: জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট। কোরআন ৩:১৫১
কোরআন ৩-১৫১
আসুন তা জেনে নিই সর্বাপেক্ষ গ্রহণযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে এই আয়াতগুলোর ব্যাখ্যাতে কী বলা রয়েছে। আসুন পড়ি ইবনে কাসীর তাফসীরে ইবনে কাসীর (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৮১ ও জালালাইনের তাফসীরে জালালাইন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩৮ প্রখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ থেকে।


উপরের তাফসীর পড়ে আপনি কী শিখলেন? ইসলাম অমুসলিমদের অনেক সম্মান এবং মর্যাদা দিয়েছে?
মৃত্যুর আগে নবীর শেষ ওয়াসিয়ত
মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর মুহাম্মদ সেই শেষ সময়েও একটি অত্যন্ত সাম্প্রদায়িক ওয়াসিয়ত করে গিয়েছেন। যা হচ্ছে, অমুসলিম মুশরিকদের আরব থেকে বিতাড়িত করতে। মৃত্যুর আগেই তিনি তার সাম্প্রদায়িকতার বিষ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বর ২৮৩৮
গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৯১৭. প্রতিনিধি দলকে উপঢৌকন প্রদান
১৯১৬. পরিচ্ছেদঃ জিম্মিদের জন্য সুপারিশ করা যাবে কি এবং তাদের সাথে আচার-আচরণ
২৮৩৮। কাবীসা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি (কোন এক সময়) বললেন, বৃহস্পতিবার! হায় বৃহস্পতিবার! এরপর তিনি কাঁদতে শুরু করলেন, এমনকি তাঁর আশ্রুতে (যমিনের) কঙ্করগুলো সিক্ত হয়ে গেল। আর তিনি বলতে লাগলেন, বৃহস্পতিবারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যাতনা বেড়ে যায়। তখন তিনি বললেন, তোমার আমার জন্য লিখার কোন জিনিস নিয়ে আস, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখিয়ে দিব। যাতে এরপর তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট না হয। এতে সাহাবীগণ পরস্পর মতপার্থক্য করেন। অথচ নাবীর সম্মুখে মতপার্থক্য সমীচীন নয়। তাদের কেউ কেউ বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া ত্যাগ করেছেন?’
তিনি বললেন, ‘আচ্ছা’ আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দাও। তোমরা আমাকে যে অবস্থার দিকে আহবান করছো তার চেয়ে আমি যে অবস্থায় আছি তা উত্তম। ’ অবশেষে তিনি ইন্তেকালের সময় তিনটি বিষয়ে ওসীয়ত করেন। (১) মুশরিকদেরকে আরব উপদ্বীপ থেকে বিতাড়িত কর, (২) প্রতিনিধি দলকে আমি যেরূপ উপঢৌকন দিয়েছি তোমরাও আনুরূপ দিও (রাবী বলেন) তৃতীয় ওসীয়তটি আমি ভুলে গিয়েছি। আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ও ইয়াকুব (রহঃ) বলেন, আমি মুগীরা ইবনু আবদুর রাহমানকে জাযীরাতুল আরব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, তাহল মক্কা, মদিনা ইয়ামামা ও ইয়ামান। ইয়াকূব (রহঃ) বলেন, ‘তিহামা আরম্ভ হল ‘আরজ থেকে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
পরিশিষ্ট
উপরে যেই হাদিস এবং কোরআনের আয়াতগুলো বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলো আশাকরি পাঠকগণ সততার সাথে যাচাই করবেন এবং কোথাও ভুল নম্বর বা ভুল বানান থেকে থাকলে তা সংশোধন করে দেবেন। এই লেখাটির উদ্দেশ্য কোন অবস্থাতেই কাউকে ছোট করা নয়, বরঞ্চ সত্য এবং যুক্তির পক্ষে শক্ত হয়ে দাঁড়ানো। সবশেষে, যুক্তির বিরুদ্ধে যুক্তি, লেখার বিরুদ্ধে লেখা, সেটাই আমরা কামনা করি। প্রতিটি মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাম্য, এবং সকল চাপাতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। শেষ করছি
S. G. Tallentyre এর বিখ্যাত একটি উক্তি দিয়ে, যেই উক্তিটি ভলতেয়ারের উক্তি বলেই বেশি পরিচিত।
I Disapprove of What You Say, But I Will Defend to the Death Your Right to Say It.
Evelyn Beatrice Hall ( pseudonym S. G. Tallentyre )

