সংশয় – চিন্তার মুক্তির আন্দোলন

  • মূলপাতা
  • জ্ঞানকোষ
  • গ্রন্থাগার
  • আর্কাইভ
    তথ্য সমূহ – ইসলাম ধর্মতথ্য সমূহ – খ্রিস্টধর্মতথ্য সমূহ – হিন্দু ধর্ম
  • নীতিমালা
    কুকিজ নীতিপ্রাইভেসিইমপ্রেসাম
বাংলাEnglishहिंदी
Menu
বাংলাEnglishहिंदी

Navigation

  • মূলপাতা
  • জ্ঞানকোষ
  • গ্রন্থাগার
  • আর্কাইভ
    • তথ্য সমূহ – ইসলাম ধর্ম
    • তথ্য সমূহ – খ্রিস্টধর্ম
    • তথ্য সমূহ – হিন্দু ধর্ম
  • নীতিমালা
    • কুকিজ নীতি
    • প্রাইভেসি
    • ইমপ্রেসাম
Site Logo

ফেরাউনের অক্ষত লাশ ও ইসলামিক প্রোপাগাণ্ডা

লেখক: আসিফ মহিউদ্দীন

প্রকাশের তারিখ: ১৬/৪/২০১৭

https://www.shongshoy.com

ভূমিকা

মুসলিম দেশগুলোর পত্রপত্রিকা কিংবা টিভি মিডিয়াতে একটি গুজব বা অপপ্রচার প্রায় সময়ই আমাদের চোখে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়েও ফেসবুক এবং ইউটিউবে ‘ফেরাউনের লাশ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে নাস্তিক বিজ্ঞানী যেভাবে মুসলমান হয়ে গেলো’ শিরোনামযুক্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই অপপ্রচারে যেমন যুক্ত হয়েছে নানা ধরণের ফেসবুক পেইজ, তেমনি এই অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য ওয়াজকারীও। এইসব ভিডিওতে লক্ষ্য করা যায়, ফরাসী লেখক ও চিকিৎসক মরিস বুকাইলির সূত্র ধরে এবং মিশরের একটি মমি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলো সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা এবং অপপ্রচার।

আমাদের অনেকগুলো অনলাইন আলোচনাতেও কিছু ইসলামপন্থী পাঠক দর্শক শ্রোতা এই নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। ফেরাউন কীভাবে এতবছর সমুদ্রের নীচে থাকার পরেও, তার দেহ অক্ষত রয়েছে! কেন পচে গলে মিশে যায় নি! এগুলোই কী আল্লাহর মোজেজা নয়? এই প্রসঙ্গে উনারা কোরআনের একটি আয়াত উল্লেখ করেন নিয়মিত, এবং ফারাওনের বা ফেরাউনের লাশের সমুদ্রের গভীরে অক্ষত থাকাকে আল্লাহর অলৌকিক কুদরত হিসেবে প্রচার করেন। আশাকরি ইসলামপন্থী বন্ধুগণ লেখাটি পড়বেন, লেখাটির বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা করবেন অথবা এই ধরণের মিথ্যা অপপ্রচারের মাধ্যমে ইসলামকে সত্য প্রমাণের হাস্যকর চেষ্টা বন্ধ করবেন।

ইসলামপন্থীদের দাবী

প্রথমেই ইসলামপন্থীদের দাবীটি লক্ষ্য করা যাক। মানুষের মুখে মুখে এ সম্পর্কিত বিভিন্ন গুজব  দীর্ঘদিন থেকেই প্রচারে ছিল। ২০১৩ সালে, আরব নিউজ নামের একটি ওয়েবসাইটের এই আর্টিকেলটি The story of Maurice Bucaille’s inspiring conversion to Islam  ছাপা হয়, যার মাধ্যমে এই গুজবটি ছড়িয়ে পড়ে। কোরআনে বলা হয়েছে কোরআন, সুরা ইউনুস, আয়াত ৯২

আর আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে নিলাম। আর ফির‘আউন ও তার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত্য প্রকাশ ও সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে তাদের পিছু নিল। অবশেষে যখন সে ডুবে যেতে লাগল, তখন বলল, ‘আমি ঈমান এনেছি যে, সে সত্তা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যার প্রতি বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে। আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’।
‘এখন অথচ ইতঃপূর্বে তুমি নাফরমানী করেছ, আর তুমি ছিলে ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত’।
‘সুতরাং আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। আর নিশ্চয় অনেক মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে গাফেল’।
— Rawai Al-bayan

অর্থাৎ কোরআন শরীফে বলা হয়েছে, ফেরাউন- যে কিনা মুসা নবীর পেছনে ধাওয়া করেছিলেন, এবং আল্লাহর কুদরতে সমুদ্রে ডুবে মারা গিয়েছিলেন, তার লাশ সমুদ্রের ভেতরে আল্লাহর কুদরত হিসেবে রয়ে যাবে। ফেরাউনের একটি ‘মমি’ দেখিয়ে ভিডিওটিতে এটাও দাবী করা হচ্ছে, এই লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে সমুদ্র থেকে। যেটা আবিষ্কার হয়েছে ১৮৮১ সালে, এবং বর্তমানে মিশরের রয়েল মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে। লাশটির অক্ষত থাকাই নাকি আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ।

ফেরাউন কে?

প্রথমেই আমাদের জানা থাকা জরুরি যে, ফেরাউন কে বা কী। ফেরাউন বা ফারাওন কোন একক ব্যক্তি নয়। ফারাও হলো গ্রিক-রোমান কর্তৃক বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত প্রাচীন মিশরীয় রাজবংশের রাজাদের প্রচলিত উপাধি। পুরুষ রাজা, এমনকি ফেরাউন শব্দটা মহিলা শাসকদের হ্মেত্রেও ব্যবহার করা হত। তাই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, ফেরাউন কোন লোক নয়, একটা উপাধি। আমাদের দেশে যেমন এখন রাষ্ট্রপতি। ফেরাউন বা ফারাও শব্দটির আক্ষরিক অর্থ “মহান ঘর” বা “great house”। মিশরের প্রাচীন শাসকদের ফারাও বলা হত। ফারাও বা ফেরাউন কোনো একক ব্যক্তি নন, বরং বংশানুক্রমে একের পর এক ফারাও মিশরকে শাসন করেছেন।

তাহলে কোন ফেরাউন?

ফেরাউন আর মুসার যেই উপকথা, সেই উপকথা আসলে বিভিন্ন জায়গার আঞ্চলিক উপকথা, যা কয়েকটি প্রধান ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ঠিক কোন ফেরাউনের কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে ধর্মবিশারদ ঐতিহাসকদের মধ্যে নানা মতভেদ আছে। সেই আলোচনা আরেকদিন করা যাবে।

মমি কী?

মমি হলো একটি মৃতদেহ যা জীবের শরীরের নরম কোষসমষ্টিকে পচে গলে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। প্রাচীন মিশরে, উত্তর চিলিতে এবং দক্ষিণ পেরুতে মানুষ মৃতদেহ মমি করার কৌশল জানতো। মিশরের রয়াল জাদুঘরে মোট ২২টি মমি রয়েছে, যেখানে ১৮টি ফারাও, এবং ৪টি অন্য অভিজাতের মমি রয়েছে Egypt’s royal mummies are on the move, and it’s not their first road trip ।

মমি কি অক্ষত অবস্থায় আছে?

এই পর্যন্ত প্রত্নতত্ত্ববিদদের দ্বরা আবিষ্কৃত অনেকগুলো মমিকে অক্ষত বলার কোন উপায় নেই। মমিফিকেশন করার সময়ই লাশের আভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গ সরিয়ে ফেলা হয়, যেগুলো দ্রুত পচনশীল। সেগুলোকে ক্যানোপিক বয়ামে সংরক্ষণ করা হয়। শরীরে লবণ বা বালি দিয়ে আদ্রর্তা বের করে নেয়ার জন্য ৭০ দিন ফেলে রাখা হয়, এবং সবশেষে তাকে কাপড় নিয়ে আপাদমস্তক মুড়ে দেয়া হয়। পরে তার সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী নির্দিষ্ট কফিনে ঢুকিয়ে রাখা হয়। এই প্রক্রিয়াটি একটি প্রাচীন মিশরীয় ধর্মীয় রীতি, এবং এটি বিজ্ঞান অনেক ভালোভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারে Mummification Step by Step ।

সেই প্রাচীনযুগ থেকেই বিভিন্ন সভ্যতায় মমি তৈরির প্রক্রিয়া মানুষের জানা ছিল। যেমন দক্ষিণ আমেরিকার Chinchorro সংস্কৃতিতে লাশকে মমি বানানো হত ব্ল্যাক ম্যাঙ্গানিজ ব্যবহার করে, এবং এই প্রক্রিয়ার বয়স প্রায় ৭,০০০ বছর। উত্তর আমেরিকার নেভাডায় আবিষ্কৃত মমির বয়স ১০ হাজার বছর বলে রেডিওকার্বন ডেটিংয়ের ফলাফল এসেছে North America’s Oldest Mummy Sheds Light on Ancient Migrations ।

আসুন এবারে দেখে নেয়া যাক, আসলেই এই মমিটি অক্ষত কিনা।

ফেরাউন
মমি বা লাশ

কার মমির কথা বলা হচ্ছে?

১৮৮১ সালে যেই মমিটি পাওয়া যায়, সেই মমিটি দ্বিতীয় রামিসেসের। এই ফেরাউনের জন্ম (প্রায়) খ্রিস্টপূর্ব ১৩০৩; মৃত্যু জুলাই বা আগস্ট ১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব; শাসনকাল হচ্ছে, ১২৭৯–১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব। উনাকে রামিসেস দ্য গ্রেট বা মহান রামিসেসও বলা হতো। তিনি ছিলেন মিশরের উনবিংশতম রাজবংশের তৃতীয় ফারাও রাজা। ইসলামিস্টদের তৈরি ভিডিওটি খুব ভালভাবে শুনলে দেখবেন, ভিডিওগুলোতে দাবী করা হচ্ছে, এই মমিটি নাকি আবিষ্কার করা হয়েছে সমুদ্র থেকে। যা ডাঁহা মিথ্যা কথা।

বলা হচ্ছে, ফেরাউনের লাশ, যা ১২৩৫ খ্রিস্টপূর্বে সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল, ৩১১৬ বছর সমুদ্রের ভেতরে থাকবার পরেও আল্লাহর কুদরতে লাশটি অক্ষত রয়ে গেছে! এটা ডাঁহা মিথ্যাচার। সত্য হচ্ছে, ৯০ বা ৯১ বছর বয়সে মৃত্যুর পরে এই ফেরাউনের মমি তৈরি করে তা ভ্যালি অব দ্য কিংসের একটি সমাধিতে কবরস্থ করা হয়; পরবর্তীতে তার দেহকে একটি রাজ সংগ্রহশালায় স্থানান্তর করা হয়, যেখানে ১৮৮১ সালে তা আবিষ্কৃত হয়, এবং বর্তমানে এটি কায়রো জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

সত্য হচ্ছে, এই ফেরাউনের এই মমিটি কখনোই সমুদ্রের তলদেশে ছিল না। ইসলামের সাথে মেলাবার জন্য খুব কৌশলে তথ্য বিকৃত করা হয়েছে।

মমি তৈরির প্রক্রিয়া

কয়েকটি ধাপে এই মমি বানানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হতো। প্রথমে মৃতব্যক্তির নাকের মাঝে ছিদ্র করে মাথার ঘিলু ও মগজ বের করা হতো। শরীরের বিভিন্ন পচনশীল অঙ্গ যেমন: ফুসফুস, বৃক্ক, পাকস্থলি ইত্যাদি বের করা হতো। এসব অঙ্গ বের করার পর আবার পেট সেলাই করে দেয়া হতো। এক্ষেত্রে তারা খুব সতর্কতা অবলম্বন করতো। কারণ পেট সেলাই করতে গিয়ে যদি পেটের ভেতর বাতাস ঢুকে যায়, তাহলে মৃতদেহ পচে যাওয়ার আশঙ্কা ছিলো। অতঃপর মৃতদেহ ও বের করা অঙ্গগুলোতে লবণ মেখে শুকানো হতো। যখন সব ভালোভাবে শুকিয়ে যেতো, তখন গামলা গাইন গাছের পদার্থ ও বিভিন্ন প্রকার মসলা মেখে রেখে দেওয়া হতো। চল্লিশ দিন পর লিনেনের কাপড় দ্বারা পুরো শরীর পেঁচিয়ে ফেলা হতো। এরপর তারা মমিগুলোকে সংরক্ষণ করে রাখতো।

ভিডিও: https://youtu.be/-MQ5dL9cQX0

সেই মমি করবার লবণকে মরিস বুকাইলি সমুদ্রে থাকা লবণ বলে দাবী করেছেন, এবং প্রচার করেছেন মমিগুলো সমুদ্রের নীচে ছিল। সত্য হচ্ছে, মিশরের মানুষ তাদের মমি করবার কৌশল ব্যবহার করেই এই মমিগুলো বানিয়েছেন। এখানে আল্লাহর কোন কুদরত ছিল না, বা অলৌকিক উপায়ে আল্লাহর মোজেজায় মৃতদেহগুলো অক্ষত রয়ে যায় নি।

মরিস বুকাইলি কে ছিলেন?

মরিস বুকাইলির জন্ম ১৯ জুলাই, ১৯২০ এবং মৃত্যু ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮ সালে। তিনি একজন একজন ফরাসি চিকিৎসক ছিলেন। বুকাইলি ১৯৪৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত মেডিসিন চর্চা করেন এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির উপর একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ১৯৭৩ সালে, বুকাইলি সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সালের পরিবারের চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন। একই সাথে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের পরিবারের সদস্যরা তার রোগী ছিল। তিনি বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান বইটির জন্য বিখ্যাত হয়েছেন।

ফেরাউনের লাশটি মরিস বুকাইলির দেখেন ১৯৭৫ সালে, যখন সেই লাশটি মিশরেই ছিল। ফ্রান্সে ফেরার পর মরিস বুকাইলি এই লাশের সাথে কোনো প্রকার গবেষণা কাজে জড়িত ছিলেন বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি, মরিস বুকাইলির প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার কোন ডিগ্রী আছে, প্রাচীন লাশ সম্পর্কে তিনি কোন বিশেষজ্ঞ মতামত দিতে পারেন, এরকম কোন সক্ষমতার প্রমাণও পাওয়া যায়নি। বুকাইলির পরামর্শে ফেরাউনের লাশটি ফ্রান্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তিনি মমিটির অবস্থা শোচনীয় দেখতে পেয়ে ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা একে সাহায্য করতে পারবেন বলে মত দেন। মিশরীয়রা মমিটি দিতে না চাইলে ফরাসী প্রেসিডেন্টের অনুরোধে তারা সেই অনুমতি পান।

ফেরাউনের মমির ফরেনসিক গবেষণার দায়িত্বে ছিলেন Pierre-Fernand Ceccaldi, তিনি তার গবেষণা প্রকাশ করেন ১৯৮৭ সালে, Bulletin de l’Académie de Médecine- জার্নালে, Recherches sur les momies: Ramsès II শিরোনামে  Recherches sur les momies: Ramsès । এই বিষয়ে মরিস বুকাইলির কোনো গবেষণাপত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি কোন ল্যাবরটরিতে এই পরীক্ষা করেছেন, তারও কোন হদিস মেলেনি।

ইসলামিস্টদের দাবী অনুসারে, মরিস বুকাইলি কয়েক ঘন্টা গবেষণার পর ফেরাউনের লাশে লবণের কিছু অবশিষ্টাংশ পান, যার ফলে তিনি দাবী করেন যে, সাগরে ডুবেই ফেরাউনের মৃত্যু হয়েছে। সাগরের লবণই সেই মমির শরীরে পাওয়া গেছে। কিন্তু তার এই দাবীর সপক্ষে তিনি কোন প্রমাণ উপস্থাপন করেননি। বরঞ্চ, এই বিষয়ে সত্যিকারের বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, মমি তৈরিতে লবণের ব্যবহার খুবই সাধারণ ব্যাপার। মমি তৈরি করতে প্রচুর পরিমাণে লবণ ব্যবহার করা হত। লবণ মাংসে এবং চামড়ার আদ্রর্তা টেনে নেয় (যেভাবে শুটকি তৈরি করা হয়ে থাকে)। তার মানে ফেরাউনের লাশে লবণ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, বরং প্রয়োজনীয়ও!

এমনকি, মরিস বুকাইলি এই লাশের গবেষণার সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন এরকমই কোন প্রমাণ মেলে না। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের তৈরি ফরেনসিক রিপোর্টের মতে এই লাশটি যার, সেই দ্বিতীয় রামেসিসের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯০ অথবা ৯১ তার শরীরের পুরোনো হাড় ভাঙার ক্ষত ছিল, বাতের সমস্যার ইঙ্গিত ছিল। অন্য আরেক গবেষকের মতে তার মৃত্যু হয়েছিল দাঁতের ক্ষয়ের ফলে মুখের সংক্রমণের কারণে। আগ্রহী পাঠকগণ এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন, এখানে এই বিষয়ে প্রচুর তথ্য প্রমাণ দেয়া রয়েছে The encyclopedia of mummies ।

এই বিষয়ে মিশরীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ Zahi Hawass একটি সেমিনারে ফেরাউনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে সমুদ্রে ডুবে মৃত্যুকে সন্দেহের চোখে দেখেছেন Is Ramses II the Pharaoh of Moses? । তিনি বলেন,

“সিটি স্ক্যান করে জানা সম্ভব নয় যে মমিটি ডুবে মারা গেছে কিনা। এটি প্রমাণ করার একমাত্র হল ফুসফুসে লবণ পাওয়া যায় কি না, কিন্তু ফুসফুস মমির ভিতরে পাওয়া যায় না।

মুহাম্মদ কীভাবে জানলেন?

মুহাম্মদ মূলত হিব্রু বাইবেল ওরফে ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং আরো কিছু উপকথাকে একত্রিত করে এই আয়াতটি লেখেন। উনার পুরনো ধর্মগ্রন্থ বিষয়ে অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজন পরিচিত মানুষ ছিলেন। যারা ছিলেন একাধারে বাইবেল এবং অন্যান্য নানা ধর্মের বিশেষজ্ঞ। এরকম বেশ কয়েকজনার কাছ থেকেমুহাম্মদ বাইবেল এবং পুরনো নানা ধর্মের কেচ্ছাগুলো শুনতেন, তা বুঝতে সমস্যা হয় না। অনেকেই সন্দেহ পোষণ করতেন যে, মুহাম্মদের কাছে আসা নানা আয়াত নাকি আসলে বিভিন্ন জনার থেকে পাওয়া।

শুধু তাই নয়, মেরাজের যেই গল্প, সেই গল্প অতি প্রাচীন। মুহাম্মদ সেই প্রাচীন উপকথাকে নতুন রূপ দিয়েছিলেন মাত্র। তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এক্সোডাসের কাহিনী মুহাম্মদ কাদের থেকে জেনেছিলেন। এবং একই সাথে, মিশরে যে মমি করে রাখা হতো ফারাওনদের, সেটাও।

মুমিনদের মধ্যে একটি বহুল প্রচলিত দাবী হচ্ছে, মুহাম্মদ যদি লিখতে পড়তে না জেনে থাকেন, তাহলে পূর্ববর্তী নবীদের গল্প তিনি কীভাবে জানলেন? এর উত্তর হাদিস থেকেই জানা যায়। হাদিসেই বর্ণিত আছে, মুহাম্মদের আমলে ইহুদি খ্রিস্টানগণ হিব্রুভাষায় তাদের গ্রন্থ মানুষকে পড়ে শোনাতেন এবং আরবিতে অনুবাদও করে শোনাতেন। মুহাম্মদ তার অনুসারীদের বারবার নিষেধ করতেন তাদের কাছে কিছু জিজ্ঞেস না করতে। সেইসাথে, কোরআনেই এই বিষয়ে পরিষ্কার আয়াত রয়েছে, যা পড়লে বোঝা যায় যে, সেই সময়ের পৌত্তলিক কুরাইশ এবং অন্যান্যরাও মুহাম্মদের এই আয়াতগুলো নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতো সূরা ফুরকান, আয়াত ৫ সূরা আনআম, আয়াত ১০৫ সূরা নাহল, আয়াত ১০৩ –

তারা বলে- ‘এগুলো পূর্ব যুগের কাহিনী যা সে [অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.)] লিখিয়ে নিয়েছে আর এগুলোই তার কাছে সকাল-সন্ধ্যা শোনানো হয়।’
— Taisirul Quran
এবং তারা বলেঃ এগুলিতো সেকালের উপকথা যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলি সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়।
— Sheikh Mujibur Rahman
তারা বলে, ‘এটি প্রাচীনকালের উপকথা যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার কাছে পাঠ করা হয়।
— Rawai Al-bayan
তারা আরও বলে, ‘এগুলো তো সে কালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; তারপর এগুলো সকাল-সন্ধ্যা তার কাছে পাঠ করা হয়।’
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
And they say, “Legends of the former peoples which he has written down, and they are dictated to him morning and afternoon.”
— Saheeh International

এভাবেই আমি নিদর্শনগুলোকে বার বার নানাভাবে বর্ননা করি। যার ফলে তারা (অর্থাৎ অবিশ্বাসীরা) বলে, তুমি (এসব কথা অন্যের কাছ থেকে) শিখে নিয়েছ, বস্তুত আমি জ্ঞানী লোকদের জন্য তা সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করি।
— Taisirul Quran
এ রূপেই আমি নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করি, যেন লোকেরা না বলে – তুমি কারও নিকট থেকে পাঠ করে নিয়েছ, আর যেন আমি একে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য প্রকাশ করে দিই।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর এভাবেই আমি নানাভাবে আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি এবং যাতে তারা বলে, তুমি পাঠ করেছ এবং আমি যাতে বর্ণনা করি, এ কুরআন এমন কওমের জন্য যারা জানে।
— Rawai Al-bayan
আর এভাবেই আমরা নানাভাবে আয়াতসমূহ বিবৃত করি [১] এবং যাতে তারা বলে, ‘আপনি পড়ে নিয়েছেন [২]’, আর যাতে আমরা এটাকে [৩] সুস্পষ্টভাবে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য বর্ণনা করি [৪]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
And thus do We diversify the verses so they [i.e., the disbelievers] will say, “You have studied,”1 and so We may make it [i.e., the Qur’ān] clear for a people who know.
— Saheeh International

আমি জানি, তারা বলে, ‘এক মানুষ তাকে [অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.)-কে] শিখিয়ে দেয়।’ অথচ দুষ্টবুদ্ধি প্রণোদিত হয়ে তারা যে লোকটির কথা বলছে তার ভাষা তো অনারব, অপরপক্ষে কুরআনের ভাষা হল স্পষ্ট আরবী।
— Taisirul Quran
আমিতো জানিই তারা বলেঃ তাকে শিক্ষা দেয় জনৈক ব্যক্তি। তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষাতো আরাবী নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরাবী ভাষা
— Sheikh Mujibur Rahman
আর আমি অবশ্যই জানি যে, তারা বলে, তাকে তো শিক্ষা দেয় একজন মানুষ, যার দিকে তারা ঈঙ্গিত করছে, তার ভাষা হচ্ছে অনারবী। অথচ এটা হচ্ছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষা।
— Rawai Al-bayan
আর আমরা অবশ্যই জানি যে, তারা বলে, ‘তাকে তো কেবল একজন মানুষ [১] শিক্ষা দেয়’। তারা যার প্রতি এটাকে সম্পর্কযুক্ত করার জন্য ঝুঁকছে তার ভাষা তো আরবী নয়; অথচ এটা- কুরআন- হচ্ছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষা।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৫/ কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারন
পরিচ্ছেদঃ ৩০৯৯. রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর বাণীঃ আহলে কিতাবদের কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করো না। আবুল ইয়ামান (রহঃ) বলেন, শুয়াইব (রহঃ), ইমাম যুহরী (রহঃ) হুমায়দ ইবন আবদুর রহমান (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মু’আবিয়া (রাঃ) কে মদীনায় বসবাসরত কুরায়শ বংশীয় কতিপয় লোককে আলাপ-আলোচনা করতে শুনেছেন। তখন কা’ব আহযাবের কথা এসে যায়। মু’আবিয়া (রাঃ) বললেন, যারা পূর্ববর্তী কিতাব সম্পর্কে আলোচনা করেন, তাদের মধ্যে তিনি অধিকতর সত্যবাদী, যদিও বর্ণিত বিষয়সমূহ ভিত্তিহীন
৬৮৫৯। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আহলে কিতাব হিব্রু ভাষায় তাওরাত পাঠ করে মুসলিমদের সামনে তা আরবী ভাষায় ব্যাখ্যা করত। (এই প্রেক্ষিতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আহলে কিতাবকে তোমরা সত্যবাদী মনে করো না এবং তাদেরকে মিথ্যাবাদীও ভেবো না। তোমরা বলে দাও, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের প্রতি যা অবতীর্ন হয়েছে এর প্রতি …. শেষ পর্যন্ত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৫/ কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারন
পরিচ্ছেদঃ ৩০৯৯. রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর বাণীঃ আহলে কিতাবদের কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করো না। আবুল ইয়ামান (রহঃ) বলেন, শুয়াইব (রহঃ), ইমাম যুহরী (রহঃ) হুমায়দ ইবন আবদুর রহমান (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মু’আবিয়া (রাঃ) কে মদীনায় বসবাসরত কুরায়শ বংশীয় কতিপয় লোককে আলাপ-আলোচনা করতে শুনেছেন। তখন কা’ব আহযাবের কথা এসে যায়। মু’আবিয়া (রাঃ) বললেন, যারা পূর্ববর্তী কিতাব সম্পর্কে আলোচনা করেন, তাদের মধ্যে তিনি অধিকতর সত্যবাদী, যদিও বর্ণিত বিষয়সমূহ ভিত্তিহীন
৬৮৬০। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, তোমরা কিভাবে আহলে কিতাবদেরকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা কর? অথচ তোমাদের কিতাব (আল-কুরআন) তাঁর রাসূলের উপর সদ্য নাযিল হয়েছে, তা তোমরা পড়ছ। যা পূত-পবিত্র ও নির্ভেজাল। এই কিতাব তোমাদেরকে বলে দিচ্ছে, আহলে কিতাবগণ আল্লাহর কিতাবকে পরিবর্তন ও বিকৃত করে দিয়েছে। তারা স্বহস্তে কিতাব লিখে তা আল্লাহর কিতাব বলে ঘোষণা দিয়েছে, যাতে তার দ্বারা সামান্য সুবিধা লাভ করতে পারে। তোমাদের কাছে যে (কিতাব ও সুন্নাহর) ইল্‌ম রয়েছে তা কি তোমাদেরকে তাদের কাছে কোন মাসআলা জিজ্ঞাসা করতে নিষেধ করছে না? আল্লাহর কসম! আমরা তো তাদের কাউকে দেখিনি কখনো তোমাদের উপর অবতীর্ণ কিতাবের বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবন ‘উতবাহ (রহঃ)

তাফসীর গ্রন্থগুলো থেকে আসুন দেখে নিই, সেই সময়ের কাফেরদের বক্তব্যগুলো যা জেনে নেয়া প্রয়োজন। বলাবাহুল্য যে, মুসলিমরা কাফেরদের এই কথাগুলো বিশ্বাস করে না, তাই তাদের গ্রন্থেও এগুলো মিথ্যা কথা সেটিই লেখা থাকবে। যে যুক্তিগুলো মুসলিমদের পক্ষে যায়, মুসলিমদের গ্রন্থে সেগুলোই থাকবে। কাফেরদের যুক্তিগুলো নিশ্চয়ই মুসলিমরা তাদের গ্রন্থে লিখবে না তাফসীরে জালালাইন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫২৯-৫৩০ –

উপসংহার

ইসলামপন্থীরা জোর গলায় এই দাবীগুলো বলে যাচ্ছে, কোন রকমের এভিডেন্স এবং তথ্য ছাড়াই। কিন্তু যত জোরেই দাবী করা হোক না কেন, অন্ধবিশ্বাস যুক্তির সামনে অসহায়ই থাকে। কারণ সত্য হচ্ছে, এগুলো আল্লাহর কুদরতে না, মিশরীয়দের মমি করবার কৌশল জানা থাকবার কারণেই তারা এগুলোর মমি করে রাখতো। এটা ছিল তখনকার সময়ের ধর্মের অংশ। তারা মনে করতো, খুব দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করতো, এই রাজারা একদিন আবার জীবিত হবেন। কিন্তু দৃঢ়ভাবে অন্ধভাবে বিশ্বাস করলেই তো সেটা সত্য হয়ে যায় না, তাই না?

“সংশয় – চিন্তার মুক্তির আন্দোলন” – সম্পর্কে

“সংশয় – চিন্তার মুক্তির আন্দোলন” একটি অলাভজনক ওয়েবসাইট—বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক ও আলোচনাকে উৎসাহিত করতে কাজ করছি। অনুগ্রহ করে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

আপনি চাইলে আমাদের কাজকে সহায়তা করতে পারেন।

PayPal-এ ডোনেট করুন

যোগাযোগ

লেখা/মতামত পাঠাতে ইমেইল করুন: info@shongshoy.com
প্রধান সম্পাদক: Asif Mohiuddin

  • Facebook
  • YouTube

আইনগত

  • প্রাইভেসি
  • ইমপ্রেসাম
  • Login

সর্বসত্ত্ব মানুষের জন্য © 2025 সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন

ডিজাইন: আসিফ মহিউদ্দীন