জ্ঞানকোষ — slavery related — যুদ্ধবন্দীদের যৌনচাহিদা

মুমিনের যুক্তিঃ যুদ্ধবন্দীদের যৌনচাহিদা পূরণ?

যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে যৌনসঙ্গম বা ধর্ষণের এই ব্যাপারটিকে সুন্দর মোড়কে উপস্থাপনের জন্য অনেক মুসলিমই দাবী করেন, যুদ্ধবন্দী নারীদের যৌন চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যেই দয়ার সাগর নবীজি এই বিধানটি করেছেন! নবীজি আসলে অনেক ভাল মানুষ তো, তাই যুদ্ধবন্দীদের জন্য তার মন অনেক কাঁদতো! এই কারণে যুদ্ধবন্দীরা যেন ঠিকঠাক সেক্স করতে পারে, এইদিকে খুবই সজাগ দৃষ্টি ছিল মানবতার নবীর। এই কারণে তিনি নিজেও বাধ্য হয়ে নিতান্তই অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই কাজ করতেন, সাহাবীদের দিয়েও করাতেন। আসলে উনারা কেউই এগুলো করতে চাইতেন না। দিন দুনিয়ার ভোগ বিলাসের দিকে তাদের কারোরই কোন মন ছিল না। তারা জান্নাতের পাখি হয়ে জান্নাতের আকাশে উড়ার কথাই সারাক্ষণ ভাবতেন। দুনিয়াবি ইন্দ্রিয় সুখ নিয়ে ভাবার সময় তাদের কোথায়? কিন্তু যুদ্ধবন্দী নারীদের বাপ ভাই স্বামীকে হত্যার পরেই সেই সব নারীদের যৌনচাহিদা হঠাৎ এমন বেড়ে যেত যে, সাহাবীগণ বাধ্য হয়ে তা করে যুদ্ধবন্দীদের সুখ দিতেন! কত কষ্টই না হতো নবী এবং তার সাহাবীদের এই কাজ করতে। এতগুলো নারীকে সুখ দেয়া তো চাট্টিখানি কথা না!

এইসব উদ্ভট কথাবার্তা যারা বলেন, তারা কীভাবে এই কথাগুলো বলতে পারেন তা আমার জন্য বোঝা মুশকিল। কিছুক্ষণ বা কিছুদিন পূর্বে যেই নারীর পিতা, স্বামী, ভাই, ছেলেকে মুসলিমরা হত্যা করেছে, সেই নারীর যৌন চাহিদা কীভাবে এত চাগাড় দিয়ে উঠলো যে, সেই সব পিতার খুনী, ভাইয়ের খুনী, স্বামীর খুনী, ছেলের খুনীর সাথেই তা পূরণ করার জন্য তারা ব্যস্ত হয়ে গেল, তা বোঝা মুশকিল। কিন্তু মুমিনদের এইসব বাজে যুক্তি কেন একইসাথে নির্লজ্জ মিথ্যাচার, তা খুব সহজেই বোঝা যায়। যুদ্ধবন্দী হিসেবে প্রাপ্ত কিংবা বাজার থেকে মুসলিমগণ ছোট ছোট বালিকা কিনে এনে তাদের সাথে হালাল উপায়েই যৌনকর্ম করতে পারে। এর মত নির্লজ্জ নির্মমতা আর কী হতে পারে আমি জানি না। এই শিশুগুলোও কী যৌন চাহিদায় পাগল হয়ে যাচ্ছিল, যার কারণে মুমিন ভাইদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও শিশুকামে বাধ্য হতে হতো? [1] [2] [3] -

সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
১. পবিত্রতা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১২০. দাসীর ইসতিবরা’আ’
১২১২. আওযাঈ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যুহরী রাহি. কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, একটি লোক একটি দাসী ক্রয় করলো যে এখনো হায়েযে উপনীত হয়নি আর গর্ভধারণের মতো (বয়সও তার) হয়নি। এমতাবস্থায় সেই লোকটি কতদিন তার থেকে সম্পর্কহীন থাকবে? তিনি বললেনঃ তিন মাস।[1]
[1] তাহকিকঃ এর সনদ সহীহ।
তাখরীজঃ এটি ৯৫৬ (অনূবাদে ৯৫১) নং এ গত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আওযায়ী (রহঃ)

সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
১. পবিত্রতা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১২০. দাসীর ইসতিবরা’আ’
১২১৩. এবং ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাছীর বলেন, পঁয়তাল্লিশ দিন।[1]
[1] তাহকিকঃ এর সনদ সহীহ।
তাখরীজঃ এটি ৯৫৭ (অনূবাদে ৯৫২) নং এ গত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাসীর (রহঃ)

সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
১. পবিত্রতা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১২০. দাসীর ইসতিবরা’আ’
১২১৪. ইয়াহইয়া ইবনু বাশার হতে বর্ণিত, ইকরিমাহ বলেন, এক মাস।[1]আব্দুল্লাহ কে জিজ্ঞেস করা হলো: এতদুভয়ের মধ্যে আপনার মত কোনটি? তিনি বললেন: তিনমাসই অধিকতর শক্তিশালী মত। আর একমাস যথেষ্ট।
[1] তাহকিক: রাবীগণ নির্ভরযোগ্য।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

ইসলামে যে যুদ্ধবন্দীদের যৌনচাহিদা মোটেও কোন গুরুত্ব রাখে না, সেটি বোঝা যায় আরেকটি বিধান থেকে। যুদ্ধবন্দী সেই সময়ে পুরুষ নারী দুইই হতো। কিন্তু নবীর মেয়ে সাহাবীরা কিন্তু যুদ্ধবন্দী পুরুষ কিংবা দাসের যৌন চাহিদা পূরণ করতে পারতো না। এক মহিলা এই কাজ করতে গিয়ে বিপদেও পড়েছিল।

সুরা মুমিনুনের এই ৫, ৬ নম্বর আয়াতের তাফসির করতে গিয়ে আল্লামা ইবনে কাসির একটি প্রাসঙ্গিক ও জরুরী বিষয় উল্লেখ করেছেন, সেটি হচ্ছে নারীর শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য দাসকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলামি নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি। এই লৈঙ্গিক বৈষম্য ইসলাম ধর্মের নারীবিদ্বেষ এবং পুরুষ যে আসলে নারীর মালিক এই ধারণার সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই। একজন নারী কোরআনের “মা মালাকাত আইমানুহুম” অংশটি পড়ে ভেবেছিলেন যে একজন পুরুষ যেহেতু তার অধীনস্থ দাসীকে দিয়ে তার নিজের শারীরিক চাহিদা মেটাতে পারে, একজন নারী হিসেবেও হয়ত তার অধিকার আছে যে তিনি তার নিজস্ব শারীরিক চাহিদা নিজের অধীনস্থ দাসকে দিয়ে মেটাতে পারবেন। কিন্তু বিষয়টি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমরের আদালতে গড়ালে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ইসলামি শাস্ত্র নারীকে এই সামান্য সমতাটুকুও দিতে সম্পূর্ণ অনিচ্ছুক। ঐ নারী ও তার পুরুষ দাস দুজনকেই শাস্তি দিয়েছিলেন খলিফা ওমর। দাসকে করা হয়েছিল শারীরিক নির্যাতন, আর মেয়েটির থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল ভবিষ্যতে অন্য পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার মৌলিক অধিকার, তথা বিবাহের অধিকারটি। নিচের পৃষ্ঠা দুইটির লাল দাগাঙ্কিত অংশটিতে বিস্তারিত পড়ুন। এ থেকে বোঝা যায়, দাসদাসীর যৌন চাহিদা পূরণ এখানে মোটেও মূখ্য নয় [4] -

তথ্যসূত্র

  1. [1] সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি), হাদিসঃ ১২১২ ↩︎
  2. [2] সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি), হাদিসঃ ১২১৩ ↩︎
  3. [3] সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি), হাদিসঃ ১২১৪ ↩︎
  4. [4] তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৯, ৫২০ ↩︎